বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই, ২০২০

অন্য বিকেল

(লেখিকা মিস নীলাশা শীল )


অন্য বিকেল গুলোর মতো সেদিনও বেশ সুন্দর প্রেমের মরশুম ছিল। সকলেরই জানা আছে আর সব প্রেম নিবেদনের জায়গার মধ্যে কলকাতার পাশ ঘিরে যে বয়ে চলছে গঙ্গা তার পাশেই হলো রবীন্দ্রসরোবর।সেদিন ছিলো ১৭ই জুলাই 20১৯। অন্য সকল যুক্তিগুলো যেনো তাদের প্রেম ভালোবাসায় মেতে ছিল কিন্তু ঠিক তাদেরই পাশে একটি অন্য রকম জুটি দেখা গেলো । মেয়েটি ভীষণ কথা বলছে আর ছেলেটি চুপচাপ হয়ে মেয়েটার চোখের দিকে তাকিয়ে বসে আছে যেন পৃথিবীতে আর কিছু নেই । আহা এ যেন এক অন্য অনুভূতি । মেয়েটি কথা বলতে বলতে ব্যাগ থেকে বার করলো একটা বড় চকলেট, ছেলেটি চকলেট খেতে ভীষণ ভালোবাসে আর সেসময়ই ছেলেটি মেয়েটিকে চোখ বন্ধ করতে বললো । -এই শোনো একটু চোখটা বন্ধ করো তো -কেন ? নাহ আমি পারবনা। -তুই করবি কি? -আবার তুই! যা করবই না । -আচ্ছা মাফ করে দাও। এবার চোখটা বন্ধ করে আমাকে রক্ষে করো দেখি । -হে হে ,আমার সোনা । চোখ খুলতেই মেয়েটি সামনে দেখতে পেলো তার সবচেয়ে প্রিয় মিষ্টি রসকদম। -ওমা, তোমার মনে আছে! আমি ভীষণ ভালোবাসি তোমাকে,অনেক অনেক ভালোবাসা। -ধুস,পাগলী এত অবাকের কি আছে। আজকে আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার ঠিক ৯০ দিন ৪৪ মিনিট ১০ সেকেন্ড বুজলে মামনি। চোখ দুটো যেন জ্বল এ ভরে গেলো আর বলতে লাগলো এত ভালোবাসা বুঝি ? -না বাসি না তো. ওরে অনেক ভালোবাসি তুই তো সব আমার। তাদের কথাবার্তা চলতে চলতেই ঠিক সেসময় একজন ঝালমুড়িওয়ালা কাকু ঝালমুড়ি নিয়ে বলতে বলতে যাচ্ছিলো - ঝালমুড়ি ঝালমুড়ি। ছেলে- ও কাকু এদিকে এ এস দেখি। মেয়ে _ কি এখন আবার ঝালমুড়ি কেন? ছেলে - ওই ডারিমিল্কে যে আমার পেটের রোখ্যে হবে না,না খেয়ে এসেছি। এতদিন পর দেখা হলো এতো তারতারি ছাড়ছি না তোমাকে। মেয়ে - আচ্ছা খাও। ছেলে - ও কাকু এবার আসো দেখি। কাকুটি সামনে আস্তে আস্তেই মেয়েটি যেন মুখে কুলুপ পাতলো। ছেলে - এই কথা বলছো না কেন,এতক্ষন তো কথা বলে বলে মাথা খাছিলে বলো কিছু…. মেয়ে -- হুম ....( অবাক হয়ে) ছেলে -- আচ্ছা,কাকু দাও তো একটা ঝাল কম করে ঝালমুড়ি। কাকু-- আচ্ছা.. ছেলে-- এই নাও কাকু, টাকা নাও। কাকু-- ও হা এই নাও,নারকোল নাও বেশি করে। ছেলে -- আরে বাহ্,কাকু তুমি নারকোল দিচ্ছ এত বেশি করে কি ব্যাপার,আজ অনেক লাভ হয়েছে বুঝি ! কাকু-- না না তোমার পাশের জন ভালোবাসে নারকোল খেতে তাই দিলাম আর কি। ছেলে -- তুমি কিভাবে জানলে কাকু।কই গো কিছু বলো আগে এসেছো বুঝি বান্ধবী দের সাথে।কাকু বড্ড বকবক করে জ্বালিয়ে দেয়।এই ফ্রি দাও ওই ফ্রি দাও।

কাকু -- ভালোভাবে থেকো তোমরা।আছে বাবা তোমার নাম কি? ছেলে -- ওহো এত কথা বলছি ভুলেই গেছি বলতে।আমার নাম তনুময় চক্রবর্তী,আর আমার পাশের জনের নাম রাই সেন। কাকু -- বাড়ি কোথায় বাবা? ছেলে -- ওই লেকটাউন এ,আর রাই এর বাড়ী হলো.. কাকু -- থাক আমি জানি এই বলতে বলতে কাকু টি চলে গেলো আর যেতে যেতে মেয়েটির হাতে ১০০টি টাকা গুঁজে গেলো। ছেলে -- কিগো চুপ কেন তুমি কিছু বলো? কাকুটি এল তুমি তখন থেকে দেখছি মুখ আড়াল করছো কি হয়েছে তোমার? আর সব থেকে অবাক তোমাকে ১০০ টাকা দিল কেন? এভাবেই কুলুপ পাতলে কিন্তু ঝগড়া লেগে যাবে বলছি বলবে কি? মেয়ে -- অনেক্ষন চুপ থেকে বলল দেখ আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি তুমি তো জানো।তুমি আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না তো? ছেলে-- একটা চড় খাবে ছাড়বো কেন তোমাকে? এ সব.. মেয়ে-- শোনো তুমি সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে আমি জানি আর তুমিও যেন আমি অনেক গরীব। হা আমি এও জানি তুমি আমাকে দেখে ভালোবেসেছো।আমি জানি অনেক ভালোবাসো কিন্তু ..... ছেলে-- কিন্তু কি বলো? মেয়ে -- ওই ঝালমুড়ি বিক্রেতা হলো আমার … ছেলে -- হা বলো.. মেয়ে --আমার বাবা ছেলে-- কি..! মেয়ে --আমাকে ছেড়ে যেও না।আজ সব বলছি তোমায় ওই লোকটা আমার বাবা।ঝালমুড়ি বিক্রি করে যা আসে তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে আর আমার কলেজ পড়াশোনাও বাবা এই দিয়েই করেছে,কিন্তু বিশ্বাস আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আমাকে ছেড়ে যেও না বলেই খুব কাঁদতে লাগলো। হ্যাঁ আমি বাবা কেও অনেক ভালোবাসি।বেশি নারকোল দিয়েছে জানে আমি ভালোবাসি আর টাকা দিয়েছে কারণ আমার ব্যাগ-এ.. আমার ব্যাগ যে এখন পরে আছে মাত্র ৩০ টাকা শুধু ট্যাক্সির ভাড়া হবে। ক্ষমা করো গো তোমাকে মিথ্যে বলেছি..কিন্তু আমার বাবা আমি আমার পরিবার খুব সৎ। ছেলে -- আগে তো বলোনি। মেয়ে -- বলিনি কারণ সুযোগ হয়নি,সম্পর্কের এর এই আমাদের তিনবারের দেখা আর 2৪ ঘন্টাতে একবার কথা হয়। কাজের শেষে ক্লান্ত তখন যে আমি এসব জানাতে চাইনি গো। ছেলে -- আচ্ছা বুঝলাম ( গম্ভীর হয়ে)। মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বললো আচ্ছা সম্পর্ক রেখো না কিন্তু আমাকে ক্ষমা করো। এই বলে মেয়েটি উঠে দাঁড়ালো।ছেলেটি তাকে বুকে আগলে নিয়ে বললো- ওরে পাগলি তুমি কি করে ভাবলে আমার ভালবাসা এত সস্তা নাকি তোমাকে ভালোবাসি তোমার বাবা আমার বাবা সে যাই করুক না কেন। আগে বললে শশুরের সামনে কি মেয়ের হাত ধরতাম। মেয়ে --সত্যি তুমি আমার সাথে থাকবে এখনো? ছেলে -- হায় রে তোমাকে বিয়ে না করে যাবো না আমি তোমাকে ছেড়ে মরে গেলে ভগবান নরকে রাখবে আমাকে। মেয়ে --চুপ এসব বলে কেও তুমি আমার শুধু আমার। এভাবেই সকল ভালোবাসার জয় হোক, টাকা বা পরিস্থিতি দিয়ে মানুষ বিচার না করে ভালোবাসা দিয়ে বিচার হোক সব। চারিদিক ভালোবাসা ভরে উঠুক।






রবিবার, ১৯ জুলাই, ২০২০

মনের আড়ালে প্রথম পর্ব


মনের আড়ালে 

প্রথম পর্ব 

                                                                                       


মৃত্তিকা দাঁড়িয়ে আছে শিলিগুড়ি বাস স্ট্যান্ডে । দাদা একটা জলের বোতল দিনতো -মৃত্তিকা বললো দোকানদারকে । 

মৃত্তিকা বোস একজন প্রাইমারি স্কুল শিক্ষিকা , স্কুলে যথেষ্ট নাম আছে তার । প্রতিটা ছাত্র মৃত্তিকা ম্যাডাম বলতে পাগল। তার পড়ানো যেমন তেমন তার সুন্দর ব্যবহার ,মুখ একটা হাসি লেগেই আছে । তার বাড়িতে সে তার স্বামীর সাথে থাকে। তার স্বামী অনির্বান,একজন সরকারি চাকুরে। তাদের বিয়ে হয়েছে দুবছর হলো। 

মৃত্তিকা জলের বোতল নিতে নিতেই ফোনটা বেজে উঠলো। অনির্বান এর নামটা ফোনের স্ক্রিনে ফুটে উঠতেই ,মেজাজটা আরো বিগড়ে গেলো মৃত্তিকা-এর ।
কি হয়েছে ? বার বার ফোন করছো কেন ?-মৃত্তিকা
তুমি কোথায় আছো ?-অনির্বান
-যেখানেই থাকি তাতে তোমার কি?
-আমায় তুমি বোলো কোথায় আছো ? আমি যাচ্ছি নিতে তোমাকে ।
না,আমি কোথায় আছি জানতে হবে না আমি কদিন আর আসবো না । - বলেই কেটে দিলো মৃত্তিকা হ্যালো হ্যালো মৃত্তিকা মৃত্তিকা ,উফফ এই মেয়েটা না।

-দার্জিলিং দার্জিলিং দিদি যাবেন নাকি?
-কত কখন দাঁড়াবে এখানে ?
-না দিদি দাঁড়াবো না সব সিট ভর্তি হয়ে গেছে ।
-ঠিক আছে চলুন তারতারি ।
মৃত্তিকা চললো দার্জিলিং ।

এই দিকে অনির্বান চিন্তা করছে আর ছটফট করছে।
এই মেয়ে তাকে আমি আর কোনোদিন কিছু বলবো না ।
অনির্বান এই নিয়ে ৬ বার ফোন করলো কিন্তু মৃত্তিকা এর ফোন লাগছেই না।

অনেক বছর পর মৃত্তিকা এই পথে আসলো।দূরের পাহাড়টা দেখে মৃত্তিকা এর অনেক কিছু মনে পরে গেলো।সেই ছোটবেলাতে বাবা মা এর সাথে এসেছিলো প্রথমবার ।সে কি মজা মৃত্তিকা এর ।
পুজো এর ছুটিতে এসেছিল তারা। তখন সে খুব ছোটো তার বেশিকিছু মনে পরে না , শুধু এইটুকু মনে আছে বাবা তাকে ঘোড়াতে ছড়িয়ে ঘুরিয়েছিলো।

এবার খুব ঠান্ডা ঠান্ডা করছে মৃত্তিকা-এর, রাগের চোটে গরম জামাকাপড় ও তেমন আনেনি।গাড়ি ছুটে  যাচ্ছে পাহাড়ের গা দিয়ে। পাহাড়ের আবহাওয়াতে মৃত্তিকা এর মাথা তা একটু ঠান্ডা হলো । শুধু পাহাড়ের সুন্দর দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন যে পৌঁছে গেছে টেরই পাইনি।
খুব খিদে পেয়ে গেছে মৃত্তিকা এর একটা ভালো হোটেল খুঁজতে হবে কটা দিন একটু নিরিবিলি তে কাটাতে হবে।কপাল করে মৃত্তিকা একটা ভালো হোটেল পেয়েও গেলো।এবার মনটা একটু শান্ত হলো ।

হোটেলে ঢোকার সময়ে মৃত্তিকা খাবারটা রুমে দিতে বলে গেলো ।
৩০ মিনিট পরে একটা সুন্দর মেয়ে খাবার দিতে আসলো ।
-দিদি ঘরে বসে খাবে নাকি ?
-হা রে ঘরে বসেই খাবো ।
-দিদি বালকোনির এইদিকটাতে এসও সামনের রাতের পাহাড়ের সুন্দর রূপ দেখতে পারবে - লাজুক মুখে মেয়েটা বললো ।
মৃত্তিকা ভাবলো কিছুক্ষুণ , ঠিক আছে চল খাবার তা রেডি করে দে আমি যাচ্ছি । সত্যি মেয়েটা ভুল বলেনি , মেয়েটি না বললে এতো সুন্দর দৃশ্য তা সে মিস করে যেত।এবার একটু আরাম করতে হবে চোখটা জুড়িয়ে আসছে ।মৃত্তিকা কতোক্ষণ ঘুমিয়েছে খেয়াল নেই আজকে ঘুম তা বেশ সুন্দর হয়েছে । এখন বেশ অন্ধকার বাইরে ।না আজকে আর বের হবো না। জানলা দিয়ে রাতের পাহাড়ের দৃশ্যটা বেশ লাগছে ।

ঐদিকে অনির্বান বেশ চিন্তিত ।
কি করবে না করবে বুজতে পারছে না ।
সবাই ফোন করে জিজ্ঞাসা করছে মৃত্তিকা কই ?
সবাইকে বলতে হচ্ছে ওর মাথা ব্যথা,ঘুমাচ্ছে ।

পাহাড়ের দৃশ্য দেখতে দেখতে অনির্বানের কথা মন পরেই গেলো।একা একা কি করছে যে ?
ভাবতে ভাবতে ফোন তা উঠিয়ে মৃত্তিকা দেখলো যে ৩০ বার ফোন করেছে অনির্বান ।
-হ্যালো কি করছো ?
-কিছুনা সবাই কে মিথ্যা বলতে বসেছি। তুমি কোথায় আছো গো ?
-বলে হবে কি ? 
-হ্যাঁ বোলো না কোথায় আছো খেয়েছো তুমি ?
-আমি দার্জিলিঙে । 
-কি তুমি একা একা  চলে গেলে ?
-হা তো আমি কি বাচ্চা নাকি ?
-না তা না তবুও,খেয়েছো কি ?
-হা খেয়েছি তুমি ?
- জোর করে  খাইয়েছে  তোমার মা । 
-মা মা আসলো কবে ?
-আসেনি , ফোন করেছিল বললাম তোমার শরীর ভালো না খেয়ে ঘুমিয়েছো ,শুনে আমাকে বললো খেয়ে  নিতে পুরো খাবার টাইম টা ফোনেই ছিল তোমার মা । 
-দেখতে হবে না কার মা  । 
-জানি , কার শাশুড়ি দেখতে হবে তো । 
-আসবে কবে তুমি ?
-দুদিন পরে । 
-বেশ এস দুদিন পর , আমার কাজের চাপ আছে প্রচুর নাহলে নিতে চলে যেতাম । 
-ঠিক  আছে আমি একই যেতে পারবো । 
-শুভ রাত্রি । 
-শুভ রাত্রি । 


( ক্রমশ )















মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই, ২০২০

নতুন জীবন

         নতুন  জীবন 

(লেখক রত্নদীপ চক্রবর্তী )

                     রাজ্ এক মধ্বর্তী পরিবারের ছেলে ।সে ভালোবাসে খেলতে দৌড়াতে। রাজ্ ক্লাস সিক্স এ পরে । আর বাকি ছেলেদের মতো সেও দুরুন্ত । সে কোনোদিনও শান্ত হয়ে বসে খাওয়া দাওয়া করে না । 

সেই রাজ্ এর জীবনের একটা স্মরণীয় ঘটনা আপনাদের সাথে ভাগ করে নিলাম । 

আজকে রাজ্ এর মনটা একদম ভালো নেই সারাদিন শুধু বৃষ্টি হয়েই যাচ্ছে । "সারাদিন কি এইভাবে বসে থাকা যায় নাকি "। আর ভালো লাগছে না একটু টিভি দেখি 

টিভিটা খুলে বসলো রাজ । 

 এই দুমাস-এর লকডাউনে  সে একবারের জন্যেও খেলতে যেতে পারেনি, সারাটাদিন শুধু বাড়িতে বসেই থাকতে হয়েছে । তার উপর কদিন ধরেই এই বৃষ্টি , জীবন তা যেন আরও দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে । 


"দেখুন দর্শকরা শহরের অবস্থা দেখুন হাটু অবধি জল আর জল
এই পাড়ার সব বাসিন্দা আশ্রয় নিয়েছে নিকটবর্তী স্কুলে" 
"ধুর টিভিতেও শুধু একই খবর" , বলে টিভিটা বন্ধ করে দিলো।  

এমন সময় তার প্রিয় বন্ধু রনি এর ফোনটা এলো
"কিরে কি করছিস ?"- রনি 
"কিছুনা রে বসে বসে  কি করা যাবে বল"- রাজ 
"হাঁ  রে , আজকে ভাবছি জল দেখতে যাবো "- রনি 
"কখন যাবি ?"- রাজ্

 "এই ধরে না চারটার দিক করে "-রনি 
"ঠিক  আছে আমিও যাবো "-রাজ্ 

"ঠিক  আছে দেখা হচ্ছে চারটা তে তাহলে "-রাজ্

"মা খেতে দাও বিকালে ঘুরতে যাবো"

"ভালো করে খেয়েনে"

"না মা আর খাবো না "
"এইভাবে খাবার নষ্ট করিস কেন?"
"আজকাল চারিদিকের অবস্থা দেখতে পারিসনা নাকি লোকজন না খেতে না পেরে কষ্ট করছে । "
"ঠিক আছে মা আর বলোনা বুজেছি। "

                                                              বিকাল চারটা 

"রনি এই রনি চল রে আর কত দেরি করবিরে । "  
"চল চল । "
রাজ্ তার বন্ধুদের সাথে চললো বন্যার জল দেখতে। 

প্রকাশ নগরে পৌঁছে গেলো রাজ্ এবং তার বন্ধুরা । রাজ্ গিয়ে দেখলো শুধু জল আর জল। বাড়ি গুলো পর্যন্ত জলে ডুবে আছে । কেও কেও রাস্তাতে টোটো এর মধ্যে বসে আছে ,কেও খোলা আকাশের নিচেই বৃষ্টি তে বসে আছে । ছোটো ছোটো ছেলে মেয়ে গুলো এরমধ্যেও খেলছে।  
স্থানীয় কিছু লোকজন এসে এই অভাগা লোকগুলো কে কিছু খাবার দিয়ে গেলো। 
রাজ্ দেখতে পাচ্ছে সবই তার মনের মধ্যে অনেককিছু চলছে কিন্তু সে টিক বুজতে পারছে না।  

এইদিকে একটা ছেলে তার মায়ের কাছ থেকে খাবার খাচ্ছে । যা খাবার আছে তাতে একজনেরও পেট ভরবে না।  
"মা তুমি খাবে না ?"
"না বাবা তুই খা আমার খিদে নেই । "
"না মা তুমিও খাও না হলে আমিও খাবো না । "
"আচ্ছা বাবা খাচ্ছি । "
রাজ্ এর চোখে জল চলে আসলো
এইদিকে সন্ধ্যা হয়ে আসছে। এবার বাড়ি না গেলেই নয়। 

বাড়ি গিয়ে রাজ্ টিফিন করে পড়তে বসলো কিন্তু পড়াতে মন বসলো না । 
রাতে খেতে বসে মা বলছে ভালো করে খেয়েনে। 
রাজ্ খেতে বসলো ঠিকই কিন্তু খেতে পারলো না বারবার বিকালের দৃশ্যটাই মনে পরে যাচ্ছে । 
ঠিকঠাক না খেয়েই উঠে গেলো । 
রাতে ঘুমাতে ঘুমাতেও একই দৃশ্য স্বপ্নে আস্তে লাগলো । মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে গেলো । না কালকে কিছু একটা করতেই হবে। 

                                                                     সকালবেলা 

"মা আমাকে দুশো টাকা দাওতো ।" 
"কি করবি তুই?"
"লাগবে দাও পরে শুনো। "

"রনি সবাই দুশো করে টাকা নিয়ে আয়ে এক ঘন্টাতে। "
"ঠিক আছে যাচ্ছি। "
সব বন্ধুরা মিলিত হলো রনির বাড়িতে
"কিরে টাকা দিয়ে কি করবি?"
"ভালো কাজই করবো। "
"চল বাজার যাই আগে তারপর সব বলছি তোদের। "

রাজ্ বন্ধুদের নিয়ে বাজার করতে গেলো। 
বাজার করে নিয়ে সোজা চলে গেলো প্রকাশনগরে। 
কালকের লোকজন গুলোর কাছে এসে সবারই খুব কষ্ট হলো। 
রাজ্ সবার আগে খুঁজে বের করলো কালকের সেই ছেলেটাকে । 
"কিরে আজকে খাওয়া হয়েছে ?" - রাজ 
"না গো আজকে কেও খেতে দেয়নি। "
"কে বললো কেও দেয়নি এইতো আমি নিয়ে এসেছি । "
সবাই ডাক তো রনি সব খাবার ভাগ করে দে।

ছেলেটাকে  রাজ্ নিজের হাতে খাইয়ে দিলো । রাজ্যের চোখ জলে ভোরে গেলো। মনের যে শান্তি তা আসলো সেটা সে কোনোদিনও বোঝাতে পারবেনা । 

"ধন্যবাদ রাজ্ তুই আজকে আমাদের চোখ খুলে দিলি "। রাজ্ এবার সব ঘটনা রনি দের বুঝিয়ে বললো। 

রাজ্ আজকে বাড়িতে সুন্দর করে সব খাবার খেলো । 
মা তো অবাক কিরে তোর শরীর ভালো তো । 
হা গো মা সব ভালো। 
বা বেশ । 
এমন সময়ে টিভি তে একটা নিউজ সম্প্রচারণ হলো,রাজ্ রনিদের মানবিকতার খবরটা দেখানো হলো রাজ্ এর মা টিভি দেখে কেঁদে ফেললো । 
"এতদিনে তুই মানুষ হলি । "
"আয়ে  বাবা আজকে আমি তোকে খাইয়েদি । "

যে রাজ্ নিজে এতো দুস্টু ছিল সে আজকে শান্ত সে আজকে মানুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে ,রাজ্ যে উপলব্ধি পেয়েছে তা তার জীবন তাকেই পাল্টে দিলো। এ যেন তার নতুন জীবন পাওয়া হলো ।

Featured Post

সতীত্ব

সতীত্ব নীলাশা শীল                                                                    (সব চরিত্র কাল্পনিক)  বাকি সব মেয়েদের মতো লীলাও বাবা মা...