রবিবার, ১৯ জুলাই, ২০২০

মনের আড়ালে প্রথম পর্ব


মনের আড়ালে 

প্রথম পর্ব 

                                                                                       


মৃত্তিকা দাঁড়িয়ে আছে শিলিগুড়ি বাস স্ট্যান্ডে । দাদা একটা জলের বোতল দিনতো -মৃত্তিকা বললো দোকানদারকে । 

মৃত্তিকা বোস একজন প্রাইমারি স্কুল শিক্ষিকা , স্কুলে যথেষ্ট নাম আছে তার । প্রতিটা ছাত্র মৃত্তিকা ম্যাডাম বলতে পাগল। তার পড়ানো যেমন তেমন তার সুন্দর ব্যবহার ,মুখ একটা হাসি লেগেই আছে । তার বাড়িতে সে তার স্বামীর সাথে থাকে। তার স্বামী অনির্বান,একজন সরকারি চাকুরে। তাদের বিয়ে হয়েছে দুবছর হলো। 

মৃত্তিকা জলের বোতল নিতে নিতেই ফোনটা বেজে উঠলো। অনির্বান এর নামটা ফোনের স্ক্রিনে ফুটে উঠতেই ,মেজাজটা আরো বিগড়ে গেলো মৃত্তিকা-এর ।
কি হয়েছে ? বার বার ফোন করছো কেন ?-মৃত্তিকা
তুমি কোথায় আছো ?-অনির্বান
-যেখানেই থাকি তাতে তোমার কি?
-আমায় তুমি বোলো কোথায় আছো ? আমি যাচ্ছি নিতে তোমাকে ।
না,আমি কোথায় আছি জানতে হবে না আমি কদিন আর আসবো না । - বলেই কেটে দিলো মৃত্তিকা হ্যালো হ্যালো মৃত্তিকা মৃত্তিকা ,উফফ এই মেয়েটা না।

-দার্জিলিং দার্জিলিং দিদি যাবেন নাকি?
-কত কখন দাঁড়াবে এখানে ?
-না দিদি দাঁড়াবো না সব সিট ভর্তি হয়ে গেছে ।
-ঠিক আছে চলুন তারতারি ।
মৃত্তিকা চললো দার্জিলিং ।

এই দিকে অনির্বান চিন্তা করছে আর ছটফট করছে।
এই মেয়ে তাকে আমি আর কোনোদিন কিছু বলবো না ।
অনির্বান এই নিয়ে ৬ বার ফোন করলো কিন্তু মৃত্তিকা এর ফোন লাগছেই না।

অনেক বছর পর মৃত্তিকা এই পথে আসলো।দূরের পাহাড়টা দেখে মৃত্তিকা এর অনেক কিছু মনে পরে গেলো।সেই ছোটবেলাতে বাবা মা এর সাথে এসেছিলো প্রথমবার ।সে কি মজা মৃত্তিকা এর ।
পুজো এর ছুটিতে এসেছিল তারা। তখন সে খুব ছোটো তার বেশিকিছু মনে পরে না , শুধু এইটুকু মনে আছে বাবা তাকে ঘোড়াতে ছড়িয়ে ঘুরিয়েছিলো।

এবার খুব ঠান্ডা ঠান্ডা করছে মৃত্তিকা-এর, রাগের চোটে গরম জামাকাপড় ও তেমন আনেনি।গাড়ি ছুটে  যাচ্ছে পাহাড়ের গা দিয়ে। পাহাড়ের আবহাওয়াতে মৃত্তিকা এর মাথা তা একটু ঠান্ডা হলো । শুধু পাহাড়ের সুন্দর দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন যে পৌঁছে গেছে টেরই পাইনি।
খুব খিদে পেয়ে গেছে মৃত্তিকা এর একটা ভালো হোটেল খুঁজতে হবে কটা দিন একটু নিরিবিলি তে কাটাতে হবে।কপাল করে মৃত্তিকা একটা ভালো হোটেল পেয়েও গেলো।এবার মনটা একটু শান্ত হলো ।

হোটেলে ঢোকার সময়ে মৃত্তিকা খাবারটা রুমে দিতে বলে গেলো ।
৩০ মিনিট পরে একটা সুন্দর মেয়ে খাবার দিতে আসলো ।
-দিদি ঘরে বসে খাবে নাকি ?
-হা রে ঘরে বসেই খাবো ।
-দিদি বালকোনির এইদিকটাতে এসও সামনের রাতের পাহাড়ের সুন্দর রূপ দেখতে পারবে - লাজুক মুখে মেয়েটা বললো ।
মৃত্তিকা ভাবলো কিছুক্ষুণ , ঠিক আছে চল খাবার তা রেডি করে দে আমি যাচ্ছি । সত্যি মেয়েটা ভুল বলেনি , মেয়েটি না বললে এতো সুন্দর দৃশ্য তা সে মিস করে যেত।এবার একটু আরাম করতে হবে চোখটা জুড়িয়ে আসছে ।মৃত্তিকা কতোক্ষণ ঘুমিয়েছে খেয়াল নেই আজকে ঘুম তা বেশ সুন্দর হয়েছে । এখন বেশ অন্ধকার বাইরে ।না আজকে আর বের হবো না। জানলা দিয়ে রাতের পাহাড়ের দৃশ্যটা বেশ লাগছে ।

ঐদিকে অনির্বান বেশ চিন্তিত ।
কি করবে না করবে বুজতে পারছে না ।
সবাই ফোন করে জিজ্ঞাসা করছে মৃত্তিকা কই ?
সবাইকে বলতে হচ্ছে ওর মাথা ব্যথা,ঘুমাচ্ছে ।

পাহাড়ের দৃশ্য দেখতে দেখতে অনির্বানের কথা মন পরেই গেলো।একা একা কি করছে যে ?
ভাবতে ভাবতে ফোন তা উঠিয়ে মৃত্তিকা দেখলো যে ৩০ বার ফোন করেছে অনির্বান ।
-হ্যালো কি করছো ?
-কিছুনা সবাই কে মিথ্যা বলতে বসেছি। তুমি কোথায় আছো গো ?
-বলে হবে কি ? 
-হ্যাঁ বোলো না কোথায় আছো খেয়েছো তুমি ?
-আমি দার্জিলিঙে । 
-কি তুমি একা একা  চলে গেলে ?
-হা তো আমি কি বাচ্চা নাকি ?
-না তা না তবুও,খেয়েছো কি ?
-হা খেয়েছি তুমি ?
- জোর করে  খাইয়েছে  তোমার মা । 
-মা মা আসলো কবে ?
-আসেনি , ফোন করেছিল বললাম তোমার শরীর ভালো না খেয়ে ঘুমিয়েছো ,শুনে আমাকে বললো খেয়ে  নিতে পুরো খাবার টাইম টা ফোনেই ছিল তোমার মা । 
-দেখতে হবে না কার মা  । 
-জানি , কার শাশুড়ি দেখতে হবে তো । 
-আসবে কবে তুমি ?
-দুদিন পরে । 
-বেশ এস দুদিন পর , আমার কাজের চাপ আছে প্রচুর নাহলে নিতে চলে যেতাম । 
-ঠিক  আছে আমি একই যেতে পারবো । 
-শুভ রাত্রি । 
-শুভ রাত্রি । 


( ক্রমশ )















1 টি মন্তব্য:

Sudipto Paul বলেছেন...

kubh valo likhechis vai....
Pore kubh valo laglo.....
Erakom aro galpo chai.

Featured Post

সতীত্ব

সতীত্ব নীলাশা শীল                                                                    (সব চরিত্র কাল্পনিক)  বাকি সব মেয়েদের মতো লীলাও বাবা মা...