নতুন জীবন
(লেখক রত্নদীপ চক্রবর্তী )
রাজ্ এক মধ্বর্তী পরিবারের ছেলে ।সে ভালোবাসে খেলতে দৌড়াতে। রাজ্ ক্লাস সিক্স এ পরে । আর বাকি ছেলেদের মতো সেও দুরুন্ত । সে কোনোদিনও শান্ত হয়ে বসে খাওয়া দাওয়া করে না ।
সেই রাজ্ এর জীবনের একটা স্মরণীয় ঘটনা আপনাদের সাথে ভাগ করে নিলাম ।
আজকে রাজ্ এর মনটা একদম ভালো নেই সারাদিন শুধু বৃষ্টি হয়েই যাচ্ছে । "সারাদিন কি এইভাবে বসে থাকা যায় নাকি "। আর ভালো লাগছে না একটু টিভি দেখি
টিভিটা খুলে বসলো রাজ ।
এই দুমাস-এর লকডাউনে সে একবারের জন্যেও খেলতে যেতে পারেনি, সারাটাদিন শুধু বাড়িতে বসেই থাকতে হয়েছে । তার উপর কদিন ধরেই এই বৃষ্টি , জীবন তা যেন আরও দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে ।
"দেখুন দর্শকরা শহরের অবস্থা দেখুন হাটু অবধি জল আর জল
এই পাড়ার সব বাসিন্দা আশ্রয় নিয়েছে নিকটবর্তী স্কুলে"
"ধুর টিভিতেও শুধু একই খবর" , বলে টিভিটা বন্ধ করে দিলো।
এমন সময় তার প্রিয় বন্ধু রনি এর ফোনটা এলো
"কিরে কি করছিস ?"- রনি
"কিছুনা রে বসে বসে র কি করা যাবে বল"- রাজ
"হাঁ রে , আজকে ভাবছি জল দেখতে যাবো "- রনি
"কখন যাবি ?"- রাজ্
"এই ধরে না চারটার দিক করে "-রনি
"ঠিক আছে আমিও যাবো "-রাজ্
"ঠিক আছে দেখা হচ্ছে চারটা তে তাহলে "-রাজ্
"ভালো করে খেয়েনে"
"না মা আর খাবো না "
"এইভাবে খাবার নষ্ট করিস কেন?"
"আজকাল চারিদিকের অবস্থা দেখতে পারিসনা নাকি লোকজন না খেতে না পেরে কষ্ট করছে । "
"ঠিক আছে মা আর বলোনা বুজেছি। "
বিকাল চারটা
"রনি এই রনি চল রে আর কত দেরি করবিরে । ""চল চল । "
প্রকাশ নগরে পৌঁছে গেলো রাজ্ এবং তার বন্ধুরা । রাজ্ গিয়ে দেখলো শুধু জল আর জল। বাড়ি গুলো পর্যন্ত জলে ডুবে আছে । কেও কেও রাস্তাতে টোটো এর মধ্যে বসে আছে ,কেও খোলা আকাশের নিচেই বৃষ্টি তে বসে আছে । ছোটো ছোটো ছেলে মেয়ে গুলো এরমধ্যেও খেলছে।
স্থানীয় কিছু লোকজন এসে এই অভাগা লোকগুলো কে কিছু খাবার দিয়ে গেলো।
রাজ্ দেখতে পাচ্ছে সবই তার মনের মধ্যে অনেককিছু চলছে কিন্তু সে টিক বুজতে পারছে না।
এইদিকে একটা ছেলে তার মায়ের কাছ থেকে খাবার খাচ্ছে । যা খাবার আছে তাতে একজনেরও পেট ভরবে না।
"মা তুমি খাবে না ?"
"না বাবা তুই খা আমার খিদে নেই । "
"না মা তুমিও খাও না হলে আমিও খাবো না । "
"আচ্ছা বাবা খাচ্ছি । "
রাজ্ এর চোখে জল চলে আসলো
এইদিকে সন্ধ্যা হয়ে আসছে। এবার বাড়ি না গেলেই নয়।
বাড়ি গিয়ে রাজ্ টিফিন করে পড়তে বসলো কিন্তু পড়াতে মন বসলো না ।
রাতে খেতে বসে মা বলছে ভালো করে খেয়েনে।
রাজ্ খেতে বসলো ঠিকই কিন্তু খেতে পারলো না বারবার বিকালের দৃশ্যটাই মনে পরে যাচ্ছে ।
ঠিকঠাক না খেয়েই উঠে গেলো ।
রাতে ঘুমাতে ঘুমাতেও একই দৃশ্য স্বপ্নে আস্তে লাগলো । মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে গেলো । না কালকে কিছু একটা করতেই হবে।
সকালবেলা
"মা আমাকে দুশো টাকা দাওতো ।""কি করবি তুই?"
"লাগবে দাও পরে শুনো। "
"রনি সবাই দুশো করে টাকা নিয়ে আয়ে এক ঘন্টাতে। "
"ঠিক আছে যাচ্ছি। "
সব বন্ধুরা মিলিত হলো রনির বাড়িতে
"কিরে টাকা দিয়ে কি করবি?"
"ভালো কাজই করবো। "
"চল বাজার যাই আগে তারপর সব বলছি তোদের। "
রাজ্ বন্ধুদের নিয়ে বাজার করতে গেলো।
বাজার করে নিয়ে সোজা চলে গেলো প্রকাশনগরে।
কালকের লোকজন গুলোর কাছে এসে সবারই খুব কষ্ট হলো।
রাজ্ সবার আগে খুঁজে বের করলো কালকের সেই ছেলেটাকে ।
"কিরে আজকে খাওয়া হয়েছে ?" - রাজ
"না গো আজকে কেও খেতে দেয়নি। "
"কে বললো কেও দেয়নি এইতো আমি নিয়ে এসেছি । "
সবাই ডাক তো রনি সব খাবার ভাগ করে দে।
ছেলেটাকে রাজ্ নিজের হাতে খাইয়ে দিলো । রাজ্যের চোখ জলে ভোরে গেলো। মনের যে শান্তি তা আসলো সেটা সে কোনোদিনও বোঝাতে পারবেনা ।
"ধন্যবাদ রাজ্ তুই আজকে আমাদের চোখ খুলে দিলি "। রাজ্ এবার সব ঘটনা রনি দের বুঝিয়ে বললো।
রাজ্ আজকে বাড়িতে সুন্দর করে সব খাবার খেলো ।
মা তো অবাক কিরে তোর শরীর ভালো তো ।
হা গো মা সব ভালো।
বা বেশ ।
এমন সময়ে টিভি তে একটা নিউজ সম্প্রচারণ হলো,রাজ্ রনিদের মানবিকতার খবরটা দেখানো হলো রাজ্ এর মা টিভি দেখে কেঁদে ফেললো ।
"এতদিনে তুই মানুষ হলি । "
"আয়ে বাবা আজকে আমি তোকে খাইয়েদি । "
যে রাজ্ নিজে এতো দুস্টু ছিল সে আজকে শান্ত সে আজকে মানুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে ,রাজ্ যে উপলব্ধি পেয়েছে তা তার জীবন তাকেই পাল্টে দিলো। এ যেন তার নতুন জীবন পাওয়া হলো ।
৪টি মন্তব্য:
খুব সুন্দর লাগলো গল্পটা
খুব সুন্দর লাগলো
valo
good
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন